মায়ামি ভাইসঃ যত গর্জায় ততই কি বর্ষায়?


দেখতে গিয়েছিলাম লাগে রাহো মুন্নাভাই।
বড় পর্দায় হিন্দি ছবি দেখাটা আমার কাছে অপচয় বলে মনে হয়। কিন্তু এ ছবিটা আসতে না আসতেই অনেক প্রশংসা শোনা হয়ে গেছে। মংগলবারদিন পরিচিত কয়েকজন বন্ধুদের সবাই ফ্রি। একসাথে সবার এরকম কাজ ছাড়া দিন সহজে পাওয়া যায় না। একটা ছবি দেখতে যাব প্রস্তাব করলাম। ছবির নাম ভেবে বের করার আগেই দলের রমণীরা প্রস্তাব দিলেন- লাগে রাহো মুন্না ভাই দেখতে হবে, হবেই। সুতরাং ঢেঁকি গেলো।
গিললাম। খুব তাড়াহুড়ো করে গেলাম সিনেমা হলে, দাঁড়ালাম চীনের প্রাচীরের মতন লম্বা একটা লাইনের পেছনে। সে প্রাচীর বেয়ে উঠে যখন কাউন্টারের সামনে যাবার সৌভাগ্য হল- জানা গেল- টিকেট নেই।
অন্য একটা হিন্দি কি যেন চলছে। সবাই সেটাই দেখতে চাইল, আমি রাজি হলাম না। ( হেলায় হারিওনা সুযোগ! ) চট করে বললাম মায়ামি ভাইস দেখব।
একটাও ট্রেলার দেখিনি, কেমন হয়েছে কিছুই জানি না, তবু পুরনো মায়ামি ভাইসের নাম ডাকের অপর ভরসা করে এই নাম প্রস্তাব করলাম।
খানিকটা গাইগুইয়ের পরে সবাই রাজি হল। ঢুকলাম গিয়ে হলে। এবং আবিষ্কার করলাম, আমরা সাতজনের দলটা বাদে পুরো হলে দর্শকের সংখ্যা দুই!
সেটার কারনও বোঝা গেল খানিক পরেই। ছবি শুরু হবার আধা ঘন্টা বাদেও কাহিনির কোন সুতো খুঁজে পেলাম না। শুরুতেই মনে হয়েছিল দুম করে কোন একটা ঘটনার মাঝ থেকে সিনেমা শুরু হয়েছে।
আলেক্সাজান্ডারে কলিন ফেরেল কে একেবারেই ভাল লাগে নি। এখানে বেশ চমৎকার মানিয়ে গেছে। লম্বা চুলে, জটিল একটা সানগ্লাসে কাউবয় ডিটেকটিভ। জেমি ফক্সকেও বরাবরই ভাল লাগে। এখানেও তাই। কিন্তু এইটুকুই।
বেশ কিছু দেখবার মতন বিচ্ছিন্ন মারামারি রয়েছে। নিঃশ্বাস আটকানো কিছু লাভ-মেকিং। আর ছবির প্রতিটি চরিত্রের কঠিন ভাব। এ সবই দেখার মতন। এবং এইটুকুই সব। বলবার মতন তেমন কিছু নেই।
পুরো মুভিটা দেখে যেটা মনে হল, এডিটর হয়ত ভুল করে ছবির চটকদার দৃশ্যগুলো রাখতে গিয়ে মুল কাহিনিগুলোই কেঁটে ফেলে দিয়েছে।
একদম শেষের গোলাগুলির দৃশ্যটায় একটু অবাক হলাম। হঠাৎ করেই মনে হল, ক্যামেরা বদলে গেছে। পুরো দৃশ্যটাকে হোম-মেইড কোন ভিডিও বলে মনে হলো। সিনেমাসুলভ কোন রঙ বা গ্রাফিক্স নেই ওখানে। আমাদের বিয়ে বা জন্মদিনে যেরকম ভিডিও কোয়ালিটি দেখা যায়, একদম সেরকম।
বাস্তবতার ছোঁয়া দিতে এরকম করা হয়েছে কি না কে জানে। উদ্দেশ্য যাই হোক, সেটা মাঠে মারা গেছে একদম।
সব মিলিয়ে কেমন লাগলো? আমাদের আশরাফুল একবার ইংল্যান্ডকে পিটিয়ে ৫২ বলে ৯৪ করেছিল। যতক্ষন ক্রিজে ছিল, মনে হয়েছে পুরোটা সময় জুড়ে যেন হাইলাইটস দেখছি। ( না না, হাসির কিছু নেই, আমাদের আছেই ওই দু একটা খড়কুটো, ওগুলোই আঁকড়ে ধরি মাঝে মাঝে!)
মায়ামি ভাইস দেখে মনে হয়েছে, পুরোটা সময় যেন একটা দুর্দান্ত ছবির ট্রেলার দেখলাম বসে বসে। কিন্তু হায়, পুর্ণাঙ্গ মুভিটাকে খুঁজে পেলাম না আর।

ছবি সুত্রঃ ইয়াহু মুভিজ।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-