Posts

Showing posts from May, 2008

হাওয়াই মিঠাই ৬

বৈদেশে বসতি গাড়লে, কমবেশি সকলেরই পছন্দের চ্যানেল একটাই হয়, নাম তার ইউটিউব। উপমহাদেশীয় চ্যানেলগুলায় এখন ট্যালেন্ট হান্ট জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতার ছড়াছড়ি। ঘরে ফিরে বউ তার জাগতিক সকল কর্ম ভুলে ইউটিউব খুলে নিয়ে বসে। এর মাঝে চ্যানেল আই সেরা শিল্পী নামের একটা অনুষ্ঠান খুব জাঁক জমক নিয়ে শুরু হয়েছে। ক্লোজআপ ওয়ানের মতই একটা প্রোগ্রাম, তবে এদের বাজনা বোধহয় আরো বেশি! আমার আবার সময়ের টানাটানি। সারাক্ষণই নিজের জন্যে মাল্টি টাস্কিং ফর্মুলা চালাতে হয়। ডেস্কটপে কোন মুভি চালিয়ে দেখতে দেখতেই ল্যাপটপে হয়ত গুগল ডক খুলে হাওয়াই মিঠাই এর ড্রাফ্ট সেরে নিচ্ছি। অথবা সচলায়তনে ঢুকে টুক টাক মন্তব্য ঝেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু বউয়ের সেটা পছন্দ নয়! সিনেমার বেলায় মুখ বুজে সহ্য করে। কিন্তু গানের এই প্রোগ্রামগুলোতে আমার হাংকি পাংকিতেও কাজ হয় না। এক দফা এক দাবী, পূর্ণ মনোযোগে সেই গান আমার দেখা চাই। তা দেখি, কিন্তু ওর চোখ এড়িয়ে ল্যাপটপে নিজের কাজ চালাতেও ভুলি না। মাঝে মাঝে খুব ভাব নিয়ে বলি, "নাহ, এই জায়গাটা ভাল গায় নি, সুর কেটে গেছে।" অথবা, "বাহ, এ তো খুব ভাল গায়!" সবসময় অবশ্য পার পাই না, মাঝে সাঝেই ধরা খে

হারানো বিজ্ঞপ্তি-

রাতের গায়ে ইদানিং দুধের সরের মতন কুয়াশা জমে থাকে, মাত্রই বৃষ্টি হয়ে গেলো যেন- ভেজা আর সতেজ ভাব চারিদিকে। এই রকম রাতগুলোয় আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বারে বারে চমকে উঠি। চাঁদের নানান রূপ দেখেছি আমি-রূপসী বা রূপালী, ময়লা কিংবা বুড়ি চাঁদ। নির্মলেন্দুর চোখ চোখে নিয়ে একসময় চাঁদকে কাঁচুলিবিহীন উলংগ বুকের যুবতীও ভেবে নিয়েছি; কিন্তু আর, কোথাও কখনও, এরকম ভৌতিক চাঁদ দেখিনি আমি। মাথা থেকে হাত দেড়েক উপরে ঝুলে আছে খুব বিশ্রী ভাবে, অনাহুত মাকড়শার অবিন্যস্ত জালের মত। একটা কালো রঙের এক চোখা নেকড়ে যেন ঘোলাটে সাদা চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। খানিক পর যখন গা শিউরে ওঠে, ত্রস্তে জানালার পর্দা টেনে সরে দাঁড়াই। বড়ই অভাগা মনে হয় এই শহরটাকে তখন, চাঁদও যেখানে তার রূপ ভুলে ফেলে আসে। আহা, কেউ যদি আজ আমাকে শহীদুল্লাহর পুকুর পাড়ের সেই মায়াবিনী চাঁদকে এনে দিত, তার সারাজীবনের কাঠি লজেন্সের পয়সা দিয়ে দিতাম। অথবা, শালবন বিহারের পাহাড়ের বুক ঘেঁষে আড়মোড়া ভেঙ্গে হাতছানি দিয়ে ডাকতো যে কিশোরী চাঁদ, তার বিনিময়ে দিয়ে দিতে পারতাম গোটা একটা শিমুল গাছ। আহা, কেউ যদি এনে দিত তারে। ------------ ২১ মে, ২০০৮

রঙ পেন্সিল

মেঘে মেঘে নিকষ কালো দুপুর, আলতা মেখে ফড়িং ওড়ে, বৃষ্টি টাপুর টুপুর। বৃষ্টি পড়ে উইপোকাদের গায়, সূর্যমূখীর বুকের ভেতর স্বপ্ন বাড়ি যায়। আকাশ বেয়ে নামলো একটা পরী, রূপনদীতে ডুবে ডুবে কী করি, কী করি! থাকুক না হয়, এমন করেই, যা-হোক, আকাশ নদী মেঘ পরী আর ছোট্ট একটা ডাহুক। এমনি করেই, টুকরো টুকরো দাগে, আঁকার খাতা ভরিয়ে তুলি, আশাবরী রাগে। ----- ১৬ মে, ২০০৮

কোনদিন আসিবেন বন্ধু

ক্লাশের ভেতরে উৎকট শব্দে হঠাৎ চমকে উঠলাম। বিরক্ত অনেকগুলো মুখের সাথে আমিও শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করি, সবাই ভ্রু কুচকে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। কি মুশকিল! এই বোরিং লেকচার শুনতে শুনতে কখন যে ঝিমুনি এসে গেছিলো টেরই পাই নি, চট করে পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল ফোনটা বের করলাম, শব্দটা হচ্ছে ওখান থেকেই। মেসেজ এসেছে। সেই মেসেজের প্রথম চারটে শব্দ পড়ে আবারো চমকালাম, " হ্যাপী বার্থ ডে দোস্ত"। কয় কি! তারিখ তো ঠিকই আছে, কিন্তু মাস কি সেপ্টেম্বর চলে এলো নাকি? মে- কই গেল তাহলে? জুন জুলাই অগাষ্ট? কিন্তু তারপরেই মনে পড়লো, উরিশশালা! আজকে ১২ই মে। আজ তো আমাদের সবার জন্মদিন! দিন-মাস-বছর হিসেব করতে গিয়ে অবাক লাগলো। চোদ্দ বছর পেরিয়ে গেছে এর মাঝে! বাসায় ফিরে ফেইসবুকে কথা চালাচালি, জিমেইলে, ফোনে- সব বন্ধুদের বহুদিন বাদে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাংগানো চললো বেশ অনেকক্ষণ। চোদ্দ বছর আগে, ১৯৯৪ এ, চাঁদে মানুষ যাবার প্রায় বছর পঁচিশেক বাদে আমরা একান্নজন নীল আর্মষ্ট্রং ১২ মে দুপুর বেলায় কুমিল্লা শহরের কাছেই কোটবাড়িতে আমাদের ছোট্ট সুন্দর কলেজে প্রথম পা রেখেছিলাম। সপ্তম শ্রেণীতে পড়া ছোট ছোট মানুষদের লিটল স্টেপস দিয়

দিন বাড়ি যায়

পায়ের তলায় চাকা লাগিয়ে দৌড়ুচ্ছি, চৌপর দিনভর ব্যস্ত থাকি। গত একমাসে প্রায় কিছুই লেখা হয়নি আমার, অবশ্য পড়েছি প্রচুর। সুখের খবর হচ্ছে, পড়তে চাইলে সচলায়তনে এখন লেখার অভাব নেই! লিখতে চাইনি, তা নয়। গত মাসে পরপর দুই রবিবার দুইটা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে মনে হয়েছিলো, এই নিয়েই লিখি না কেন? বেশ তো মজা হলো। আমাদের দেশীয় উৎসবগুলো নিয়ে এখানে এইসব সমস্যায় পড়তে হয়। যদি উইকেন্ডে আপনা থেকেই না পড়ে, তাহলে জোর করে সেটাকে এনে উইকেন্ডে ফেলে উৎযাপন করা হয়। বৈশাখ তো বৈশাখ, এমনকি ঈদের আনন্দও এইরকম শিফটিং এর কবল থেকে বাঁচতে পারে না সবসময়। দেশে লোকে ঈদ করে চাঁদ দেখে, আমরা এখানে করি উইকেন্ড দেখে। প্রথম উৎসবে গিয়ে পেটপুরে সিংগারা খেলাম। ফেইস-বুকিশরা জানেন, তার আগের একটা সপ্তাহে আমার হঠাৎ করে সিংগারা-বিরহ শুরু হয়েছিলো। সেটা সামাল দেয়ার জন্যেই একরকম হুড়োহুড়ি করে গেছিলাম বৈশাখ আয়োজনে। আর ২য় উৎসব হয়েছিলো অনেক বেশি জমজমাট করে, মেলবোর্নের বিখ্যাত ফেডারেশান স্কোয়ারে। সিডনীতে বাংগালী অনেক, বেশ বড় করেই তাই উৎসব হয় ওদের। কিন্তু মেলবোর্নে উৎসব মানেই চেনা-জানা দুতিনটে কম্যুনিটি সেন্টারের কোন একটায় ছোটখাটো আয়োজন। মেলবোর্নবাস