কবি বলেছেন -

কবি বলেছেন, জ্ঞানের কোন শর্টকাট নাই।
কিন্তু আমরা বুদ্ধিমান মানুষ, বোকা কবির কথায় ভুলবো কেন? আমরা তাই জ্ঞানার্জনের জন্যে অসংখ্য শর্টকাট খুঁজে বের করে ফেলি। উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি বানাই, পাঞ্জেরী হই, ফোকাস করে করে পড়ি।
ছোটবেলায় কোন এক গল্পে পড়েছিলাম, বালিশের নিচে ভূগোল বই রেখে ঘুমিয়েছে এক ছেলে, রাতের বেলা স্বপ্নের ভেতর তাই সে সারা দুনিয়ার ভূগোল দেখে ফেলেছে।

এই গল্প পড়ে ব্যাপক উৎসাহিত হয়েছিলাম। পরীক্ষার আগের রাতে বালিশের নিচে বই নিয়ে ঘুমানোটা প্রায় অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছিলো। স্বপ্ন-মামার যেন কোন স্বপ্ন দেখাবে এসব ভেবে কষ্ট না হয়, এ জন্যে যে চ্যাপ্টার পড়া হয়নি, ঠিক ঐ চ্যাপ্টারটাই খুলে রেখে ঘুমাতাম। অবশ্য দুঃখের বিষয়, তেমন কাজে আসেনি এই বুদ্ধি।

আরেকটু বড় হয়ে যখন প্রোফেসর শঙ্কুর সাথে দেখা হলো, খুবই মজা পেলাম। দেখি এই ভদ্রলোক নানান রকম বটিকা নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। মৎস্যবটিকা নামের এক জিনিস খাওয়ান তার বিড়ালকে, বিড়াল নাকি আসল মাছের সাথে তার তফাৎ করতে পারে না। নিজের জন্যে আছে ক্ষুধানিবারণ বটিকা। এটাও জব্বর জিনিস, একবার খেলে দুতিনদিন আর খাওয়া লাগে না।

আমি ভাবলাম, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হওয়া ভীষণ দরকার। অনুরোধ করে একটা লেখাপড়া বটিকা বানিয়ে নিবো, খেলেই যেন লেখাপড়া সব পেটে ঢুকে বসে থাকে। এটা বানাতে বেশি কষ্ট হলে আলাদা আলাদা করেই না হয় বানাতে বলবো- বাংলা বটিকা, কেমিস্ট্রি বটিকা, ফিজিক্স বটিকা।

বড় হতে হতে বুঝে গেলাম, বটিকায় কাজ হবে না আসলে। জ্ঞানের আসলেই কোন শর্টকাট নেই।

সম্প্রতি ইউটিউব ঘুরতে ঘুরতে আমার মনে হলো, নাহ, একটা শর্টকাট হয়তো সত্যিই এখনো আছে, লোকেদের অগোচরে যদিও!

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম নিয়ে কিছু দুই নম্বুরি করেছে কয়েকটা কোচিং সেন্টার। সেখান থেকে ফরম কিনেছিলো প্রায় কুড়ি হাজার শিক্ষার্থী, তারা কেউই নাকি এডমিট কার্ড পায়নি, পরীক্ষায় বসাও অনিশ্চিত। ভুক্তভোগী সেসব শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে মিছিল করেছে, নিজেদের দাবী জানিয়েছে। আমাদের সর্ব-কর্ম-পটীয়সী পুলিশ যথারীতি সেখানে গিয়ে লাঠি চার্জ করে বসেছে। বিশৃঙ্খলা তাদের সহ্য হয় না কি না!

ইউটিউবের একটা ভিডিওতে এটিএন বাংলার সংবাদের একটা ছোট্ট অংশ দেখলাম। সেখানে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এসেছে কিছু, দেখছিলাম, তারপরে দেখি পুলিশদেরও দেখাচ্ছে, তাও দেখছিলাম, এবং সবশেষে দেখলাম, এই ছাত্রদের লাঠিপেটা করা ছাড়াও সাথে ফাও হিসেবে জনৈক পুলিশ অফিসার জ্ঞান অর্জনের সহজ উপায়ও তাদের বাতলে দিচ্ছেন। তিনি সুন্দর ভাবে ক্যামেরার সামনেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, লেখাপড়া পুটকির মধ্যে ভইরা দিবো একদম!



আমি বিস্মিত, হতবাক। এই সাংঘাতিক শর্টকাট দুনিয়ায় আর কারও মাথায় কেন আসলো না?
তাইতো রে ভাই, দিন নেই রাত নেই বই খুলে বসে বসে পড়ালেখা শেখা, তারচেয়ে এটা কতই না কাজের। আমি বারবার রিওয়াইন্ড করে সেই পুলিশ অফিসারের মুখমন্ডল দেখলাম। ইস, বুঝতে পারছি যে এভাবে পেছন দিয়ে লেখাপড়া ভরে ভরে, ইয়ে, আই মিন, করে করে ভদ্রলোকের খুব কষ্ট হয়েছে এতদিন। কিন্তু দেখুন, সেটা কত কাজে এলো! লাঠি সোটা হাতে একেবারে পুলিশ বনে গিয়েছেন। বুঝুন তাহলে!

একটু দুঃখও হলো। এবারের নোবেল ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে বেকুবগুলা, তা না হলে এই পুলিশ ভদ্রলোকের নাম সেই কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়া যেতো। ইদানিং কত কিছু করে লোকে নোবেল পায়, ওবামার মত ভাগ্যবান হলে কিছু না করেও পায়। আর, আমাদের পুলিশ অফিসার, এরম চমৎকার একটা আবিষ্কারের যথাযোগ্য মূল্য পাবে না?
তা হয় না।
কবি বলেছেন, নামে নয়, কর্মেই পরিচয়। তাই উক্ত পুলিশ অফিসারকে তার কর্মের উপযুক্ত পুরস্কারে ভূষিত করার দাবি জানাই।

পরিশিষ্টঃ
---------
১।পুলিশের কথাটা একটুও সেন্সর না করেই লিখে দিলাম। ইচ্ছে করেই। আমি দুঃখিত যে, এরকম অশালীন কাজ করেছি বলে আমি একটুও দুঃখিত নই।
২। এটিএন বাংলার সেই সাংবাদিককে ধন্যবাদ, সংবাদ সম্পাদনার টেবলে বসেন যারা, তাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ এ অংশটুকু না কেটে এটা টিভিতে সম্প্রচার করেছেন বলে। এই নিউজটা সবার দেখার দরকার ছিলো।

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-