কবি
যখন বয়েস কম ছিলো, অনেক সাহসী ছিলাম তখন। একেকটা ছোট ছোট রুলটানা কাগজের ডায়েরি, সেগুলোতে গোল গোল হরফে নানা রকম হাবিজাবি লিখে রাখতাম। কেউ জিজ্ঞেস করলে যে “কী এগুলো?”, নেপোলিয়ান অথবা আলেকজান্ডারের চেয়েও বেশি অহমিকা নিয়ে উত্তর দিতাম, “এগুলো কবিতা। কবিতা লিখেছি। ”
তারপর অনেকদিন গেলো। দিন যেতে যেতে পৃথিবীতে সবচেয়ে বাজে যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো যে, আমি বড় হয়ে গেলাম।
কেন যে বড় হলাম, এই নিয়ে আমার দুখের সীমা নাই। এখন আর ডায়েরিতে হিজিবিজি লিখতে পারি না, লেখা আসেই না একদম। অনেকদিন পরে পরে হয়তো আসে দুয়েকটা লাইন, ভীষণ আনন্দ নিয়ে সেগুলোকে লিখে ফেলি খাতায়, কিন্তু তারপরে যখন পড়তে যাই, বুঝে যাই যে আমার সাহস কমে গেছে, আগের মতন দুর্মর বা দুর্বার ভঙ্গিতে এখন মোটেও সেগুলোকে কবিতা দাবি করতে পারি না। মনে ভয় হয়।
অথচ কবি হবার লোভ আমার অনেকদিনের। এই লোভের বয়েস, যদি দিন মাস গুনতে বসি, তাহলে ঠিক আমার বয়েসেরই সমান। কিন্তু কবি হতে পারিনি আমি, অথবা কবি হওয়া হয়ে ওঠেনি আমার।
ক্লাস সেভেনের দিকে নির্মলেন্দুতে জমেছিলাম খুব। এই দীর্ঘকায় কবির কবিতাগুলো কেমন করে যেন আমাকে জাদুটোনা করে ফেলেছিলো। শহরে থাকি বলে চাঁদ দেখতে পাইনা তখন, কলেজে বিদ্যুত গেলে বিশ্রি শব্দে জেগে উঠত জেনারেটর, তবু, নির্মলেন্দুর কবিতাগুলোই তখন আমার কাছে চাঁদমাখা স্বপ্ন হয়ে আসতো, আমাকে চন্দ্রাহত করে রাখতো সেগুলোই।
কবিতা আসলে আফিমের মতই, এমনি বাজে একটা নেশা, নেশা জেনেও যাকে ছেড়ে যাবার কোন উপায় নাই।
কবিতার রাস্তাটাও অনেক বর্ণিল, সেখানে পথ হারাবার ভয় নেই, সেখানে আঁধার নামলে পরে শক্তি, সুনীল, জীবনানন্দরা আবুল হাসানের সাথে মিলে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে আলো জ্বেলে দেন।
তো এরকম ল্যাম্পপোস্ট হবার লোভেও আমি কবি হতে চেয়েছিলাম।
কদিন আগে নতুন একটা মুভি দেখা হলো, ঋতুপর্ণ ঘোষের, সব চরিত্র কাল্পনিক। মুভিটা একজন কবিকে নিয়ে, একজন কবি, যার প্রয়াণের পরে শোকসভা থেকে সিনেমার শুরু। সেখানে মৃত কবিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তার ইঞ্জিনিয়ার সহকর্মীরা, তার কবিতা পাঠকেরা, আবৃত্তিকারেরা, এবং তার স্ত্রী। মুভি দেখতে দেখতেই ভাবছিলাম, একটা সত্যিকারের কবির চরিত্রই আসলে এসেছে সেখানে, খানিকটা বোহেমিয়ান, যে তার ঘরের কাজের লোককে নিয়ে লিখে ফেলে দীর্ঘ কবিতা, অথচ সে লোক রাতে না খেয়ে আছে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করতে ভুলে যায়। অথবা স্ত্রীর অসুখের সময়ে উদাসীন কবি, অথচ স্ত্রীর লেখা একটা কবিতার ছেঁড়া কাগজ খুজে নিতে যে গভীর রাতে বনে বাঁদাড়ে দৌড়ায়।
এরকম একটা কবি, সিনেমায় দেখালো, তার মৃত্যুতেও কত মানুষ কাঁদলো, কত মানুষে তাকে ভালবাসলো!
সিনেমা শেষ করে অনেকদিন পরে কিছু লাইন লিখে ফেললাম ঝটপট, তারপরে, গুটি গুটি পায়ে বুকশেলফ থেকে ডেকে নিয়ে আসলাম আবুল হাসানকে, বালিশের এক পাশে তাঁকে বসিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, বুঝলেন গুরু, আমারও কবি হতে ইচ্ছে করে খুব।
তারপর অনেকদিন গেলো। দিন যেতে যেতে পৃথিবীতে সবচেয়ে বাজে যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো যে, আমি বড় হয়ে গেলাম।
কেন যে বড় হলাম, এই নিয়ে আমার দুখের সীমা নাই। এখন আর ডায়েরিতে হিজিবিজি লিখতে পারি না, লেখা আসেই না একদম। অনেকদিন পরে পরে হয়তো আসে দুয়েকটা লাইন, ভীষণ আনন্দ নিয়ে সেগুলোকে লিখে ফেলি খাতায়, কিন্তু তারপরে যখন পড়তে যাই, বুঝে যাই যে আমার সাহস কমে গেছে, আগের মতন দুর্মর বা দুর্বার ভঙ্গিতে এখন মোটেও সেগুলোকে কবিতা দাবি করতে পারি না। মনে ভয় হয়।
অথচ কবি হবার লোভ আমার অনেকদিনের। এই লোভের বয়েস, যদি দিন মাস গুনতে বসি, তাহলে ঠিক আমার বয়েসেরই সমান। কিন্তু কবি হতে পারিনি আমি, অথবা কবি হওয়া হয়ে ওঠেনি আমার।
ক্লাস সেভেনের দিকে নির্মলেন্দুতে জমেছিলাম খুব। এই দীর্ঘকায় কবির কবিতাগুলো কেমন করে যেন আমাকে জাদুটোনা করে ফেলেছিলো। শহরে থাকি বলে চাঁদ দেখতে পাইনা তখন, কলেজে বিদ্যুত গেলে বিশ্রি শব্দে জেগে উঠত জেনারেটর, তবু, নির্মলেন্দুর কবিতাগুলোই তখন আমার কাছে চাঁদমাখা স্বপ্ন হয়ে আসতো, আমাকে চন্দ্রাহত করে রাখতো সেগুলোই।
কবিতা আসলে আফিমের মতই, এমনি বাজে একটা নেশা, নেশা জেনেও যাকে ছেড়ে যাবার কোন উপায় নাই।
কবিতার রাস্তাটাও অনেক বর্ণিল, সেখানে পথ হারাবার ভয় নেই, সেখানে আঁধার নামলে পরে শক্তি, সুনীল, জীবনানন্দরা আবুল হাসানের সাথে মিলে ল্যাম্পপোস্ট হয়ে আলো জ্বেলে দেন।
তো এরকম ল্যাম্পপোস্ট হবার লোভেও আমি কবি হতে চেয়েছিলাম।
কদিন আগে নতুন একটা মুভি দেখা হলো, ঋতুপর্ণ ঘোষের, সব চরিত্র কাল্পনিক। মুভিটা একজন কবিকে নিয়ে, একজন কবি, যার প্রয়াণের পরে শোকসভা থেকে সিনেমার শুরু। সেখানে মৃত কবিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তার ইঞ্জিনিয়ার সহকর্মীরা, তার কবিতা পাঠকেরা, আবৃত্তিকারেরা, এবং তার স্ত্রী। মুভি দেখতে দেখতেই ভাবছিলাম, একটা সত্যিকারের কবির চরিত্রই আসলে এসেছে সেখানে, খানিকটা বোহেমিয়ান, যে তার ঘরের কাজের লোককে নিয়ে লিখে ফেলে দীর্ঘ কবিতা, অথচ সে লোক রাতে না খেয়ে আছে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করতে ভুলে যায়। অথবা স্ত্রীর অসুখের সময়ে উদাসীন কবি, অথচ স্ত্রীর লেখা একটা কবিতার ছেঁড়া কাগজ খুজে নিতে যে গভীর রাতে বনে বাঁদাড়ে দৌড়ায়।
এরকম একটা কবি, সিনেমায় দেখালো, তার মৃত্যুতেও কত মানুষ কাঁদলো, কত মানুষে তাকে ভালবাসলো!
সিনেমা শেষ করে অনেকদিন পরে কিছু লাইন লিখে ফেললাম ঝটপট, তারপরে, গুটি গুটি পায়ে বুকশেলফ থেকে ডেকে নিয়ে আসলাম আবুল হাসানকে, বালিশের এক পাশে তাঁকে বসিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, বুঝলেন গুরু, আমারও কবি হতে ইচ্ছে করে খুব।