পুনর্জন্ম বিষয়ক একটি ব্যর্থ রচনা-

ভূমিকাঃ
-------
আমি টিভি খুব একটা দেখি না। একটা লম্বা সময় হোস্টেলে থেকেছি বলে টিভি-র প্রতি আকর্ষণ একদমই উবে গেছে। সিরিজ ধরনের নাটক বা ডকুগুলোর প্রতি আবার বিশেষ এলার্জি আছে, টিভিতে ওগুলো দেখাই হয় না তেমন।
এখানে এসে অবশ্য একটা উপকার হয়েছে, দোকানে গেলে বাংলাদেশী সিরিয়ালগুলো এক ডিভিতে সব দিয়ে দেয়, বিজ্ঞাপনের কোন ঝঞ্জাট নেই, মাঝখানে খবর দেখার টানাটানি নেই, একেবারে এক বসায় দশ পর্ব এক সাথে দেখে ঢেঁকুর তোলা যায়। কিন্তু এখানকার চ্যানেল বা তাতে প্রচারিত অনুষ্ঠান বিষয়ে আমি একেবারেই ওয়াকিবহাল নই। বাঙালীদের কোন আড্ডায় গেলে কেউ যখন চলমান কোন বিজ্ঞাপন বা সিরিয়াল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, আমি তখন ভ্যাবলার মত চেয়ে থাকি।

এই আমারও অবশ্য মাঝে মাঝে টিভি দেখা হয়। এবং কিম আশ্চর্যম, সেটা হয় অন্য কারও বাসায় বেড়াতে গেলে। হতে পারে আমার অমিশুক স্বভাব এর জন্যে দায়ী, অথবা নতুন কারও সাথে হুট করে আলাপ জমাতে পারি না বলে হয়তো গভীর মনোযোগে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু বাসায় ফিরলেই আবার যে-কে সেই। আমার ঘরের টিভি মাসে একবারও জেগে ওঠে না।

বর্ণনাঃ
----------
সেদিন এমনই করে এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে টিভি দেখছিলাম। এনিমেল রেসকিউ ধরণের একটা প্রোগ্রাম। এখানে একটা সংস্থার মত আছে, এরা বিপদে পড়া পশু পাখিকে উদ্ধার করতে দৌড়ায়। ব্যাপারটা লাইভ সম্প্রচার নয় অবশ্য, তবে ঐ উদ্ধারকারী দলের সাথে সবসময়েই টিভি ক্যামেরা থাকে। উদ্ধারের পুরো সময়টাকে তারা ক্যামেরায় বন্দী করে নেয়, পরবর্তীতে টিভিতে সম্প্রচার করে।
টিভিতে উপস্থাপনের স্টাইলটা বেশ আকর্ষণীয়। এক সাথে তিনটা ঘটনা দেখাতে থাকে পরপর। আমি যেদিন দেখছিলাম, সেদিন দেখাচ্ছিলো, একটা বাড়ির সীমানার দেয়াল এবং ঘরের দেয়ালের মাঝখানে ৫ সেন্টিমিটারের মতন একটা ফাঁক, সে জায়গাটায় একটা বিড়াল আটকে গেছে, আর বেরুতে পারছে না।
অন্যদিকে দেখালো, একটা ক্যাঙারু, বেশ ক্ষ্যাপাটে বোঝাই যাচ্ছিলো, সেটা ঢুকে গেছে জাল দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট জায়গার মধ্যে, ওখানেই আটকে আছে সেটা।
আর সমান্তরালে অন্য যেটা দেখাচ্ছিলো, একটা বাড়ি থেকে পঁচা গন্ধ পেয়ে এনিমেল রেস্কিউ টিমকে ফোন করে প্রতিবেশিরা, গিয়ে দেখা যায় বাড়ির বাসিন্দারা কেউ নেই, ভেতরে দুটো কুকুরের একটা মরে পড়ে আছে, অন্যটা মৃতপ্রায়।

তিনটে ঘটনার শুরুটা দেখায় পরপর, শ্বাসরুদ্ধ্বকর অবস্থা যাকে বলে। বিজ্ঞাপন বিরতির পরে আবার শুরু হয় অনুষ্ঠান, দেখায়, বিড়ালটাকে উদ্ধারের জন্যে রেসকিউ টিমের সাথে যোগ দিয়েছে দমকল বাহিনী। ওরা এসে বাড়ির দেয়াল ভাঙ্গার আয়োজন করা শুরু করে। সৌভাগ্যবশত, দেয়ালে হাতুড়ি ঠোকার শব্দে ভয় পেয়ে বিড়ালটা নিজেই টেনে হিঁচড়ে কেমন করে যেন বেরিয়ে আসে। টিভি পর্দার উদ্ধারকর্মীদের সাথে সাথে আমিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।

অন্যদিকে ক্যাঙারুটাকে ধরবার জন্যে বেশ বেগ পেতে হয় সবাইকে। একটা চাদরে একদম অতর্কিতে আটকে ফেলা হয় তাকে, তারপরে ছেড়ে দায় হয় বনের ভেতর।
আর সর্বশেষ, কুকুরটাকে তুলে নিয়ে আসা হয় উদ্ধারকর্মীদের গাড়িতে করে, সোজা পশু হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তারদের হাতে সঁপে দেয়া হয় তাকে।

পুরো অনুষ্ঠানটাই মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখলাম। রেসকিউ টিমের তৎপরতা আসলেই সাধুবাদ দেয়ার যোগ্য। কোন পশু-পাখী বিপদে আছে, এরকম ফোন পাওয়া মাত্রই তারা ছুটে যায় সেখানে, তারপরে অসীম ধৈর্য্য ও যত্নের সাথে উদ্ধার প্রক্রিয়া চালায়।
------------------------------------------------------------------------
টিভি প্রোগ্রামের গল্প শুনছেন, মাঝে একটা বিজ্ঞাপন বিরতি থাকবে না তা কী হয়?
নিলাম একটা বিরতি, ফিরে আসছি তারপরেই, সঙ্গে থাকুন।
------------------------------------------------------------------------

ঈদ গেল, অথবা যায়নি এখনও, যাই যাই করছে। আমরা এখানে কুরবানী দেই না, কিন্তু পরিচিত অনেকেই দেয়। তাদের বন্ধু-তালিকায় আছি বলে, অথবা কে জানে, হয়ত আপনাতেই "গরীব-দুখী"দের তালিকায় পড়ে যাই বলে ঘরে প্যাকেট ভর্তি কুরবানীর গোশত চলে আসে।
ঈদের খাবার দাবার তৃপ্তি নিয়ে খাই পেট পুরে।
আজ খেয়ে দেয়ে, পত্রিকা খুলে বসলাম। গত কদিনের ব্যস্ততায় খবর পড়া হয়নি একদম। প্রথম আলো-র প্রথম পাতা খুলেই দেখি লঞ্চডুবির ছবি।


ইতিমধ্যে মারা গেছে ৭৬ জন। ৩৬ জনকে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। সাড়ে তিনশ ধারণ ক্ষমতার লঞ্চে যাত্রী তুলেছিলো তিন হাজার। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ভেতরের খবর পড়তে গিয়ে মন খারাপ হয়ে গেলো আরো। লঞ্চে পানি ওঠা শুরু করেছিলো শুরু থেকেই, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ পাত্তা দেয়নি। খানিক পরে যাত্রীরা টের পেয়ে নেমে যেতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়, অনেকেরই টিকেট কাটা হয়নি সে জন্যে। টিকেট না কেটে কোন ফাঁকিবাজ যাত্রী যেন না নামতে পারে, "বুদ্ধিমান" চালক তাই লঞ্চকে নিয়ে যায় মাঝ নদীতে। ওখানে [i]বিশৃংখল[/i] যাত্রীদের মধ্যে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে আনসার বাহিনি তাদের মারধর করে লঞ্চের পেছন দিকে নিয়ে যায়, সবাই একপাশে চলে আসায় তাল সামলাতে না পেরে লঞ্চ ডুবে যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছে, সরকারী ডুবুরিরা ডুব দিয়ে দিয়ে "[i]কী যেন খুঁজে[/i]", কিন্তু কোন লাশ পায় না। নিহতদের আত্মীয় স্বজনেরা তাই নিজেরাই নেমে পড়ে পানিতে লাশের খোঁজে।
উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ঠিক ৩৭ ঘন্টা পরে, যদিও আগের দিন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এসে বলে গিয়েছিলেন, এক ঘন্টার মধ্যেই জাহাজ এসে উদ্ধারকাজ শুরু করবে।

উপসংহারঃ
-------------

পরজন্মে পৃথিবীতে নামবার আগেই যদি সুযোগ পাওয়া যায়, বঙ্গদেশের মানুষ হয়ে জন্মাবার বদলে এই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর-তীরবর্তী দেশের ক্যাঙারু বা নিদেনপক্ষে একটা বিড়াল হয়ে জন্মানো যায় কি না, এই বিষয়ে ঈশ্বরের কাছে তদবীর করার উপায় জানা আছে কারো?

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-