বাংলা ইবুক

বাংলা ইবুক নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়েই যাচ্ছি। হাতে অবশ্য গিনিপিগ আছে একটাই, আমার সবেধন নীলমণি কাঠের সেনাপতি
ইবুকের বাজারে বাংলা বই একসময় সদর্পে ঘুরে বেড়াবে, এরকমটাই প্রত্যাশা করি। এখনকার ইন্টারনেট আর টেকি যুগে ব্যাপারটা খুবই সহজ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরবর্তীতে কখনও বই বের করলে প্রিন্টেড এডিশানের সাথে সাথে ইবুক এডিশানেও বই প্রকাশ করবো। 

আমি যেটা করেছি, সেটা একটু লিখে রাখি, উৎসাহী কারো কাজে লাগবে আশা করি।

কিন্ডল ফর আইপ্যাড
প্রথমেই স্ম্যাশওয়ার্ডস ডট কমে একটা একাউন্ট করে নিয়েছি। এটা ফ্রি। ওদের ওখান থেকে বই বিক্রি করলে কিছু কমিশন কেটে রাখে ওরা, এমনই সহজ শর্তে একাউন্ট খুলে ফেলা যায়। আমার কাছে খুবই ব্যবহার-বান্ধব লেগেছে সাইটটি। আরেকটা কারণ হলো, বইটা যদি ওদের প্রিমিয়াম ক্যাটালগে অন্তর্ভুক্ত হবার জন্যে কোয়ালিফাই করে তাহলে সেটা শুধু ওদের সাইটেই নয়, একই সাথে কিন্ডল, আইবুক বা ন্যুক এর স্টোরেও ওরা বইটা বিক্রির জন্যে পাঠিয়ে দেয়। কোয়ালিফাই করাটা অবশ্য কষ্টসাধ্য কিছু নয়, ওদের বলে দেয়া নিয়মগুলো মেনে বই প্রকাশ করলেই সাধারণত হয়ে যায়।

একাউন্ট খোলার পরে মূল বইটাকে এমএসওয়ার্ডের ডক ফাইলে কিছু ঘষামাজা করে নিতে হয়। বেস্ট আউটপুট যেন আসে, সেটা নিশ্চিত করতে ওদের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু ফর্ম্যাটিং করে নিতে হয়। পুরো প্রক্রিয়াটায় ঘন্টাখানেকের বেশি দরকার হয় না। ফর্ম্যাটিং এর মূল বিষয়গুলোও একেবারেই সোজা।

 আমি খানিকটা লিখে রাখি-
১। ফন্ট- পুরো বইয়ের ফন্ট সাইজ একই করে নেয়া ভালো। 
২। প্যারাগ্রাফ স্টাইল- এটা যেন পুরো বইয়ে একই থাকে। প্রতি প্যারাগ্রাফের শুরুতে এন্টার কী- চেপে দেয়া স্পেসগুলো না রাখাই ভাল। বরং ওয়ার্ডের অপশানে গিয়ে প্যারাগ্রাফ স্টাইলে এটা ঠিক করে দিতে হয়।
৩। ছবি- কাভার বা আর কোন ছবি যোগ করতে চাইলে খেয়াল রাখতে হবে যেন এটা ফ্লোটিং ইমেজ না হয়। অর্থ্যাৎ, ছবি প্রোপার্টিজে গিয়ে এটাকে ইন লাইন উইথ টেক্সট হিসেবে সেট করে দিতে হবে। 
৪। পেইজ ব্রেক- এটা অবশ্য আমার নিজের বুদ্ধিতে করা। এক চ্যাপ্টারের শেষের সাথে পরের চ্যাপ্টারের শুরু গুলিয়ে ফেলতে না চাইলে ওয়ার্ডের পেইজ ব্রেক অপশান ব্যবহার করাই ভালো। এটা কাজে লাগে প্রিন্টার্স লাইন বা লেখক পরিচিতির পাতাটাকে আলাদা করার জন্যেও। 

আসলে যারা ইবুক প্রকাশ করতে চাইবেন তাঁদের উচিৎ পুরো ম্যানুয়ালটি একবার পড়ে ফেলা। 

আইবুক
ফর্ম্যাটিং এর পরে ফাইলটি প্রস্তুত হয়ে গেলে স্ম্যাশওয়ার্ডের একাউন্ট থেকে আপলোড করে দিলে ওটা নিজে থেকে বিভিন্ন ফর্ম্যাটে কনভার্ট হয়ে যায়। ইপাব, মোবি, পিডিএফ, আরটিএফ, টেক্সট, পামডক ইত্যাদি নানা ফর্ম্যাট, এমনকি অনলাইনের পড়ার উপযোগি ভার্সানেও। বইয়ের দাম নিজের ইচ্ছেমতো ঠিক করা যায়, এমনকি চাইলে ফ্রি-ও করে দেয়া যায়। সম্ভাব্য পাঠকেরা যেন বইটির কিছু পাতা স্যাম্পল হিসেবে নামিয়ে দেখতে পারেন, সেই সুবিধাও আছে সেখানে।

বাংলা ফন্ট নিয়ে সবসময়েই কিছু গোলমাল থেকে যায় অবশ্য। এখানেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। আমার বইটার ইপাব ফর্ম্যাট খুবই চমৎকার এসেছে, কিন্তু স্ম্যাশওয়ার্ডের করা মোবি ফাইলটায় দেখি কিছু ফন্ট ভেঙ্গে গেছে। পরে অবশ্য এই সমস্যারও সমাধান করতে পেরেছি। ক্যালিব্রে সফটওয়্যার দিয়ে স্ম্যাশওয়ার্ডের করা ইপাব থেকে মোবি-তে কনভার্ট করতেই দেখি কী তামশা, সব ফকফকা! একদম চমৎকার ইবুক হয়ে দাঁড়িয়েছে বইটা। 

আমার কিন্ডল রিডার নেই অবশ্য, পড়াপড়ির সব কাজ আইপ্যাড দিয়েই চালিয়ে দিই।
দুটা স্ক্রিণশট দিলাম আইপ্যাড থেকে। 

পরিশেষে, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার সকল লেখক ও প্রকাশকদের ইবুকের অপার সম্ভাবনাময় জগতটি ঘুরে ফিরে দেখার অনুরোধ জানাই। 

Popular posts from this blog

The Boy, the Mole, the Fox and the Horse | Charlie Mackesy

মধ্যাহ্নভোজ | উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ | রূপান্তরঃ তারেক নূরুল হাসান

আরেকটিবার-